
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বাস শ্রমিক কর্তৃক শরীয়তপুর জেলার জাজিরার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী (১৬) গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।
শরীয়তপুরের আন্ত: জেলা পরিবহনের চারজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগে মামলা হয়েছে। সদর উপজেলার উত্তর মধ্যপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে রোববার রাতে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।
এলাকাবাসী ওই ছাত্রীকে শরীয়তপুর বনবিভাগের পুকুরঘাট থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়।
গণধর্ষণের অভিযোগে পরিবহন শ্রমিক রাকিব মন্ডলকে (২২) আটক করেছে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার পুলিশ। রাকিব মন্ডল এর পিতার নাম সামাদ মণ্ডল।
ভুক্তভোগি ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে পালং মডেল থানায় একটি মামলা করেছে ।
পালং মডেল থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলা সদরের একটি স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর বাড়ি ছিল নড়িয়া উপজেলায়।
গত বছর নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়ে জাজিরার একটি গ্রামে আশ্রয় নেয় তার পরিবার। ওই ছাত্রী রোববার বিকালে তার এক আত্মীয়র বাড়ি যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর জেলা শহরের বাস টার্মিনালে আসেন।
তখন সেখানে দেখা হয় পরিবহন শ্রমিক ইসলাম ফকির নামে এক যুবকের সাথে।
ইসলাম ওই ছাত্রীর আত্মীয়র বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে, ইসলামের বন্ধু রাকিব মন্ডল, সবুজ রাড়ী (২২) ও ইকবাল (২৪) সাথে অটোরিকসায় তুলে দেয়।
রাকিব, সবুজ ও ইকবাল মেয়েটিকে নিয়ে মনোহর বাজারে যান। সেখানে কিছু খাওয়া দাওয়ার পর মেয়েটিকে রাকিবের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে মেয়েটির মুখ বেঁধে রাকিব, সবুজ ও ইকবাল প্রথম দফায় ধর্ষণ করেন। এরপর সন্ধ্যায় ওই বাড়ি যায় ইসলাম।
রাতে ইসলাম ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। পুণরায় ধর্ষণ করা নিয়ে ইসলামের সাথে রাকিব, সবুজ ও ইকবাল কথা কাটাকাটি হয়। তখন ইসলাম মেয়েটিকে তাদের বাড়ির পাশের শরীয়তপুর বনবিভাগের পুকুর ঘাটে নিয়ে যায়। পুকুর ঘাটে নিয়েও মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। আসামী সকলের বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভার উত্তর মধ্যপাড়া গ্রামে।
পরে স্থানীয় এক অটোরিকসা চালক তাদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলে ইসলাম মেয়েটিকে বিয়ে করবে এমন প্রতিশ্রতি দিয়ে সেখান থেকে পালায়। পরে ওই অটোরিকসা চালক বিষয়টি পরিবন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জানান। মেয়েটিকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেন। পরিবহন শ্রমিকরা অপরাধিদের বিচার করবেন এনম প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েটির পরিবারকে থানায় যেতে দেননি।
মঙ্গলবার শরীয়তপুর আন্ত: জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার অভিযুক্ত রাকিব মন্ডলকে বাস টার্মিনালে দেখতে পেয়ে আটক করে পুলিশে তুলে দেয়। রাতে ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা পালং মডেল থানায় মামলা করেন।
ওই ছাত্রী বলেন, মাদারীপুরে এক আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর বাস টার্মিনালে আসি। সেখানে দেখা হয় ইসলামের সাথে। সে আমার পূর্ব পরিচিত ছিল। আত্মীয় বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে সে তার বন্ধুদের সাথে অটোরিকসায় তুলে দেয়। কিন্তু তারা কৌশল করে আমাকে নির্জন স্থানে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে একটি ঘরে আটকে ধর্ষণ করে। ইসলাম, রাকিব ও সবুজ কয়েক দফায় আমাকে ধর্ষণ করেছে। এখন আমি কিভাবে সমাজে মুখ দেখাব? আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ছাত্রীর বাবা বলেন, যারা আমার মেয়েকে মুখ বেঁধে নির্যাতন করেছে তাদের শাস্তি হোক। আমি ওদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
পালং মডেল থানা হাজতে আটক রাকিব মন্ডল বলেন, আমি ওই মেয়েটির সাথে কিছু করিনি। ইসলাম, সবুজ ও ইকবাল তাকে ধর্ষণ করেছে। তারাই ওই মেয়েটিকে আমার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। আমি নির্দোশ। ইসলাম, সবুজ ও ইকবাল কোথায় আছে তা আমি জানিনা।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, চারজন মিলে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এমন অভিযোগে এক শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। ভিকটিম মেয়েটির বাবা চারজনকে আসামী করে মামলা করেছে । মামলার বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।