আজ বুধবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ডেঙ্গু: ছেলে হাসপাতালে, স্ত্রীর জানাজায় যাওয়া হলোনা সাংবাদিক জাবেদের

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শরীয়তপুরের সাংবাদিক শেখ জাবেদের স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০) মারা গেছেন। বুধবার (২৮ আগষ্ট) দিনগত রাত ২টার দিকে ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
একই রোগে ছেলে তামজীদ (১২) ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ছেলেকে হাসপাতালে রেখে স্ত্রীর জানাজা ও দাফনে যেতে পারেননি সাংবাদিক জাবেদ।
জানা গেছে, ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর গত শনিবার (২৪ আগষ্ট) সকালে মা ও ছেলেকে একসাথে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই দুপুরে ছেলেকে ঢাকা পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। ওই দিন ছেলের সাথে শারমিনকেও ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছেলেকে ভর্তি করানো হলেও শারমিনকে ভর্তি করানো লাগবে না বলে জানান চিকিৎসক। শারমিনের অবস্থা ভালো আছে বলে তাকে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে সেবন করতে বলেন চিকিৎসক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলের দেখাশোনা করার ফলে নিজের দিকে নজর দিতে পারেন নি শারমিন।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) শারমিনের অবস্থা খারাপ দেখে চিকিৎসক তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেন।
বুধবার (২৮ আগষ্ট) দুপুরের দিকে অবস্থার অবনতি হলে শারমিনকে দ্রুত আইসিউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু কোথাও আইসিউ বেড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুজির পর রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিউতে নিয়ে যাওয়া হয় শারমিনকে। আইসিউতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বুধবার (২৮ আগষ্ট) রাত ২ টার দিকে শারমিন মারা যায় বলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) সকালে স্বজনরা শারমিনের মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ফরিদপুর সদর উপজেলার নরসিংহদিয়া গ্রামের শহিদ ফকিরের মেয়ে শারমিন। বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) বাদ জোহর বাপের বাড়িতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছেলের পাশে রয়েছেন শেখ জাবেদ। এ কারণে স্ত্রী শারমিনের দাফনে যেতে পারেন নি তিনি।
শেখ জাবেদ রাজবাড়ী সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের মৃত শেখ আব্দুর রহমানের ছেলে। পুলিশে চাকরীর সুবাদে ১৯৮৪ সাল থেকে শরীয়তপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেছেন শেখ আব্দুর রহমান। ছোট বেলা থেকে শরীয়তপুরেই বেড়ে ওঠার সুবাদে বাবা চাকরী থেকে অবসর ও মারা যাওয়ার পরেও শরীয়তপুর ছেড়ে যাননি সাংবাদিক শেখ জাবেদ।
শরীয়তপুর জেলার শহরে ভাড়াবাসায় স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন জাবেদ। তামজিদ (১২) ও তানজিদ (২) নামে তার দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী শারমিন চলে গেলেন। বড় ছেলে তামজিদ ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থঅয় ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শেখ জাবেদ দৈনিক অধিকারের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি ও শরীয়তপুরের দৈনিক রুদ্রবার্তা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত আছেন।
শেখ জাবেদ বলেন, অনেক চেষ্টা করেও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না। এখন ছেলের অবস্থাও আশঙ্ককাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। ছেলেকে চিকিৎসা করানোর জন্য স্ত্রীর দাফনেও যেতে পারিনি। কারণ ছেলের দেখাশোনা করার কোন লোক নেই। আমার স্ত্রী ও ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।