আজ সোমবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শরীয়তপুরে পদ্মায় অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন, বিক্রি হচ্ছে পাড়েই

শরীয়তপুরে অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন। প্রতিদিনই জেলেরা জাল ফেলছে নদীতে। ইলিশ নিধন ও বিক্রির যেন এখন মেলায় পরিণত হয়েছে পদ্মাপাড়ে। পদ্মা নদীর পারে দুর্গম এলাকায় শতাধিক স্থানে মা ইলিশ ধরে পদ্মাপাড়েই প্রকাশ্যে বেচাবিক্রি করছে জেলেরা। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। কমবেশি প্রতিদিনই আটক করা হচ্ছে জেলে, নৌকা ও মাছ। চলছে জেল-জরিমানাও। তারপরও পদ্মা নদীতে অব্যাহতভাবে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রজনন মৌসুম হিসেবে ৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ সময়ে মাছধরা বন্ধ রাখতে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জেলেদের। তারপরও থেমে নেই জেলেদের মাছধরা। একদিক দিয়ে প্রশাসনের লোকেরা অভিযান চালাচ্ছে তো অন্যদিক দিয়ে জাল ফেলছে জেলেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থেকে জাজিরা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে দিন-রাত মাছ শিকার করছে জেলেরা। শত শত নৌকা ও ট্রলার দিয়ে নদীতে মাছ শিকার যেন এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। জেলেদের ধরা মাছ বিক্রি হচ্ছে পদ্মাপাড়ে দুর্গম এলাকায়। কম দামে ইলিশ মাছ কিনতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে অভিনব কায়দায় ট্রাভেল ব্যাগ, ব্যবহারের কাপড়চোপড় আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ব্যাগ ইত্যাদিতে করে ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় মিলছে এক হালি ইলিশ। যা কয়েক দিন পরই বাজারে বিক্রি হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

গত শুক্রবার বিকেলে জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি দুর্গারহাট এলাকার পদ্মাপাড়ে কথা হয় রশিদ খার সঙ্গে । তিনি বলেন, আমরা পদ্মায় মাছ ধরি। মাছ না ধরলে কী খাব। পদ্মায় মাছ ধরি, পাড়ে নেমে বিক্রি করি। এ সময় ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। আয়ও বেশি। চারটি ইলিশ প্রতিটি এক কেজি করে, দাম ১ হাজার টাকা। মানুষ ইলিশ কিনে মেইন রোড দিয়ে যায় না। বিকল্প রোডে যায়। কারণ মেইন রোডে পুলিশ টহল দেয়।

বড়কান্দি দুর্গারহাট এলাকায় কাজিরহাট এলাকা থেকে মাছ কিনতে আসা মো. ইকবাল বলেন, আমি ২০ হালি ইলিশ কিনেছি। প্রতি হালি ইলিশ ৯০০ টাকা করে কিনেছি। কাজিয়ারচর গ্রামের ছাত্তার মাদবর বলেন, প্রশাসনের লোকজনের চোখ আড়ালে থেকে মাছ শিকার করতে হয়। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন আসতে দেখলে অনেক সময় জাল ছেড়ে দিয়ে জেলেরা চলে আসে। আমার একটি নৌকা রয়েছে। ভরা মৌসুমে মাছ ধরতে না পারলে সারা বছরের লোকসান পোষাতে পারব না। তাই ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকার করছি। পুলিশ এলে সব লোকজন মাছ ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আরেক মাছ ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, সরকারের দেওয়া খাদ্য সহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে নিষিদ্ধ সময়ে ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকার করছি।

শরীয়তপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, প্রতিদিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত আট দিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলেকে আটক করা হয়েছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। ইলিশ নিধনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা একদিক দিয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও অন্যদিক দিয়ে জেলেরা নেমে যাচ্ছে।