আজ সোমবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শরীয়তপুরে বিরানী খেয়ে অর্ধশত সমাপনী পরীক্ষার্থী অসুস্থ

শরীয়তপুরে বিরানী খেয়ে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার্থী সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষায় অংশগ্রহন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ১৪ নভেম্বর শরীয়তপুর শহরের স্বনামধন্য এসডিএস একাডেমিতে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিষয়টি জেলা প্রশাসক সহ পালং মডেল থানাকে অবগত করা হলে খাবার পরিবেশনকারি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে মালিক পালিয়ে যায়। চিকিৎসক বলেছেন খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত অসুস্থ পরীক্ষার্থীরা এখনও পুরোপুরি সুস্থ না। পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও তরল খাবারের সরবরাহ রাখতে হবে।
এসডিএস একাডেমিতে গিয়ে অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল হক এর সাথে আলাপকালে জানায়, ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বরাবরই জেলায় প্রথম স্থান দখল করে আসছে এসডিএস একাডেমি। এই বছরও ৩২ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ২০১৯ এ অংশগ্রহন করবে। সেই লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ৩২ জন পরীক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠানের ২২ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিভাবকগণ অংশগ্রহন করেন। অনুষ্ঠান শেষে পালং উত্তর বাজারের (রাজগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন) মদিনা বিরানী হাউস থেকে সরবরাহকৃত বিরানী পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ খায়। যারা বিরানী খেয়েছে পরবর্তীতে সেই সকল পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণের পেটে ব্যাথা, বমি ও মাথা ঘুরাতে থাকে। তাদের সবাই পাতলা পায়খান ও বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ১৭ নভেম্বর রোববার থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। অসুস্থ অনেক শিক্ষার্থী এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল হকও সেই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে মদিনা বিরানী হাউসের মালিককে দিয়ে কেউ এই ষড়যন্ত করতে পারে। এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসক ও পালং থানায় অভিযোগ করেছেন।
এসডিএস একাডেমির পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক আসাদ বলেন, আমাদের এইবারের পরীক্ষার্থীরা পূর্বের সকল শিক্ষার্থীদের চাইতে ভালো। আশা করছি ৩২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে কম পক্ষে ২৫ জন জিপিএ ৫ পাবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে হয়তো কেউ এই ষড়যন্ত্র করতে পারে।
শিক্ষার্থী অভিভাবকবৃন্দ দাবী করেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূর্বেই জানতো ওই মদিনা বিরানী হাউজ নিন্মমান ও বাসী খাবার পরিবেশন করে। তবুও তারা সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খাবার সরবরাহ করেছে। তদুপরি অভিভাবকদের দাবী তাদের শিশুদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যেন পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়। বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন ও তরল খাবার অভিভাবকগণ সরবরাহ করবেন কিন্তু প্রয়োজনে যেন বাচ্চাদের সেই স্যালাইন ও তরল খাবার দিতে পারে সেই ব্যবস্থা যেন থাকে।
ঘটনা পরবর্তী বিষক্রিয়া সম্পন্ন খাবার সরবরাহকারী মদিনা বিরানী হাউস বন্ধ করে মালিক পালিয়েছে। শনিবার একাধিকবার সেখানে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলতে দেখা যায়। দেখা যায় দোকানের সাইবোর্ড ছেড়া। মালিককে খোঁজ করতে দেখে পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা এসে জানায়, যে দিন খাবার সরবরাহ করে তার আগের দিন (বুধবার) খাবার রান্না পরবর্তী একটা অর্ডার বাতিল হয়। বৃহস্পতিবার সেই খাবার প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। সেই নষ্ট ও বাসী খাবার বাচ্চাদের সরবরাহ করা হয়। সেই খাবার খেয়ে বাচ্চারা অসুস্থ হতে পরে। ইতোপূর্বেও এই ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটিয়েছে মদিনা বিরানী। একাধিকবার দরবার শালিশ করে জরিমানা দিয়ে রেহাই পেয়েছে মদিনা বিরানীর মালিক।
অসুস্থ বেশীরভাগ শিশুই শরীয়তপুরে অবস্থিত বেসরকারি ক্লিনিক ডক্টরস পয়েন্টে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মাসুমা আক্তার বলেছেন, যারা বিষক্রিয়া যুক্ত খাবার খেয়েছে তাদের সকলেই অসুস্থ হয়েছে। বাচ্চারা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি। অসুস্থ বাচ্চাদের নিবির পরিচর্যা প্রয়োজন। পরীক্ষা কেন্দ্রে তাদের বারবার পাতলা পায়খানা ও বমি হতে পারে। সেখানে তাদের জন্য খাবার স্যালাইন ও তরল খাবার সরবরাহ রাখতে হবে। বাচ্চাদের বমি ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। তখন জরুরী টয়লেট ব্যবহার করতে হবে।
পালং মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা অভিযোগ দাখিল করেছে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।