
শরীয়তপুর জেলা নড়িয়া থানার ওসি’র তৎপরতায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার জীবন বেপারী ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেফতার করেছে নড়িয়া থানা পুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়ে জানেেত চাইলে নড়িয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর-২০১৯ তারিখে নড়িয়া থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি অত্র থানায় যোগদানের পূর্বে গত ইং ৬ জুন-২০১৯ তারিখে ১০/১২ জন অজ্ঞাত নামা ডাকাতরা নড়িয়া থানাধীন ঈশ্বরকাঠি ভাংগা কালভার্টের পাশে ডাইভারসন রাস্তার উপরে বিদেশ ফেরত যাত্রীর প্রাইভেটকার আটক করে তাদেরকে মারধর করে। ডাকাতরা তাদের কাছে থাকা ডলার, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ডাকাতি করে নিয়ে যায়। উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনায় নড়িয়া থানার মামলা নং ০৬(০৬)২০১৯ রুজু হয়। ১২ সেপ্টেম্বর নড়িয়া থানাধীন চাকধ-শিমুলতলা পাকা রাস্তার উপর ৮/১০ জন ডাকাত ট্রাক, অটোরিক্সা, মোটর সাইকেল, ওয়াজ ফেরত কয়েকজনকে আটক করতঃ দা দিয়া কোপাইয়া এবং মারধর করে মোবাইল টাকা পয়সা নিয়ে তাদেরকে রাস্তার পাশে হাত-পা বেধে ফেলে রেখে যায়। উল্লেখিত বিষয়ে নড়িয়া থানার মামলা নং ০৭(০৯)২০১৯ রুজু হয়। আমি থানায় যোগদানের পরেই নড়িয়া থানা এলাকায় দীর্ঘ দিনের ডাকাতির সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করে ডাকাতি প্রতিরোধের জন্য আমার নেতৃত্বে থানার কয়েকজন চৌকস অফিসার এসআই/ মোঃ ইমরান হোসেন, এসআই/রিপন নাগ, এসআই/শেখ আশরাফুল (ডিবি, শরীয়তপুর), এএসআই/আব্দুল কুদ্দুস, এএসআই/মোঃ নজরুল ইসলাম, এএসআই/মোঃ শামীম আলী, এএসআই/মোঃ শহিদুল হক, এএসআই/মোঃ সাগর হোসেন, কং/৮৪৩ হারুন অর রশিদ’দের নিয়া ডাকাতি প্রতিরোধ এবং ডাকাত গ্রেফতারের জন্য একটি টিম গঠন করি। আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে উপরে উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা সক্রিয় দুর্র্ধর্ষ ডাকাত দলের ডাকাত সুমন শেখ, মোঃ স্বপন, মোঃ আনোয়ার হোসেন আরিফ, মোঃ আলামিন সরদার ওরফে জুয়েল, মোঃ মোশারফ হোসেন, মোঃ রহমান সিকদার ওরফে মামুন, মোঃ মারুফ ওরফে শাওন ও মোঃ আলাউদ্দিন বেপারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই এবং তাদের নিকট থেকে ডাকাতি মামলায় লুন্ঠিত ০৭ (সাত) টি বিভিন্ন কোম্পানীর মোবাইল ফোন, ১০ (দশ) টি বিভিন্ন কোম্পানীর সিম কার্ড, ০১ (এক) টি বিদেশী টর্চ লাইট, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ০৩ (তিন) টি দা, ডাকাতির সময় ব্যবহৃত ০২ (দুই) টি কালো রংয়ের ছোট মুখোশ এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত পাটের সূতালী ও গামছা উদ্ধার করতে সক্ষম হই। গ্রেফতারকৃত সকল আসামিগন বিজ্ঞ আদালতে দেওয়া তাদের জবানবন্দিতে ডাকাতির বিশদ বর্ণনা দেয়। বিজ্ঞ আদালতে তাদের স্বীকারোক্তি মুলক প্রদত্ত জবানবন্দিতে এবং আমার তদন্তে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের দলনেতা দুর্র্ধর্ষ ডাকাত জীবন বেপারী, পিতা-মৃত আমীর হোসেন বেপারী, সাং-থিরোপাড়া, থানা-নড়িয়া, জেলা-শরীয়তপুর এর নাম উঠে আসে। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার জীবন বেপারী ঢাকার কেরানীগঞ্জ জিনজিরা এলাকায় আত্মগোপন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে এবং ৩/৪ মাস পর পর নড়িয়া এলাকায় এসে ভদ্র লোকের বেশ ধারন করে সকলকে ছালাম, আদাব দেয় ও নামাজ কালাম পড়ে এবং কোথায় কিভাবে ডাকাতি করা যায় সেই সব এলাকার রাস্তা ভালোভাবে রেকি করে সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার শেষে সে তার সহযোগী অন্যান্য ডাকাতদের ঢাকা থেকে এনে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে। গভীর রাতে দুর্র্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার জীবনের নেতৃত্বে ডাকাতরা দা, লাঠি, লোহার রড, মুখোশ, রশি নিয়া রাস্তার পাশে কোন নির্জন জায়গা, কলাক্ষেতে ও ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। সুযোগ মতো রাস্তায় গাড়ী বা নিরীহ মানুষকে পেলে আটক করিয়া তাদেরকে মারধর করে এবং তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্নলংকার সহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। দুর্র্ধর্ষ ডাকাত জীবন ডাকাতি শেষে তার গ্রুপের ডাকাতদের বিভিন্ন পথে বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকায় পাঠাইয়া দেয় এবং সে নিজেও ঢাকায় আত্মগোপন করে। উক্ত ডাকাতরা ঢাকা কেরানীগঞ্জ কামরাঙ্গীর চর, হাজারীবাগ এলাকায় ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে থাকে। আমি থানায় যোগদানের পর দুর্র্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার জীবনকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন সময়ে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও গাজীপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যে, উক্ত দুর্র্ধর্ষ ডাকাত জীবন বেপারীর পূর্বের ডাকাত দলের সদস্যরা শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার মামলা নং ০৭(০৯)২০১৯ মুলে গ্রেফতার হয়ে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে থাকায় সে নতুন ডাকাত দল সংগঠিত করে নড়িয়া উপজেলার যে কোন স্থানে ডাকাতি করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতেছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে অবশেষে ০৪ ফেব্রুয়ারি সেই কাঙ্খিত সাফল্য আসে। দুর্র্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার জীবনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। জীবন যেহেতু দুর্র্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার, সেহেতু তার কৌশল ভিন্ন। তার কৌশলের কাছে সিনেমার গল্পও হার মানে। তাকে গ্রেফতারের সাথে সাথে সে জ্ঞান হারানোর ভান করে মুখ দিয়ে ফেনা বের করতে থাকে এবং এমন ভাব করে যে, সে মারা যাচ্ছে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষনিক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা দেয়ার পরও সে সুস্থ্য হয় না, অসুস্থ্যতার ভান ধরে থাকে। তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে দুর্র্ধর্ষ ডাকাত সর্দার জীবনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়া যাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কর্তব্যরত ডাক্তারগণ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তার প্রেসার, হার্টবিট এবং শারিরীক অবস্থা স্বাভাবিক দেখিয়া জানান যে, আসামি পুলিশের নিকট থেকে বাচার জন্য অসুস্থ্য হওয়ার মিথ্যা অভিনয় করতেছে। ডাক্তারগণ তাকে সুস্থ্য বলে ঘোষনার পর আমরা কৌশল অবলম্বন করে তাকে এবং তার পরিবারকে বুঝাতে সক্ষম হই সে সুস্থ্য হলে তাকে আমরা ছেড়ে দিব। তার পরিবার ডাকাত জীবনকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের সাথে কথা হয়েছে জানালে, পুলিশের বিভিন্ন কৌশলের কাছে অবশেষে দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার জীবন বেপারী হার মানে।