
দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। যার ভিন্ন ভাবে প্রতিবাদের চিত্র লক্ষ্য যায়, নড়িয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ধ্রুব এর হাতে থাকা ফেস্টুনে লেখায়। ১১ ফেব্রুয়ারি নড়িয়া জাজিরা সড়কের গোলাম মাওলা সেতুর পাশে দাড়িয়ে নিরবে প্রতিবাদ করেন। হাতে থাকা ফেস্টুনে লেখা ছিলো, “আমার বন্ধুরা এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়, এতে আমার খুব ভয় হয়”। ছবিটি তার ফেসবুক আইডিতে ভাসছিলো সাথে তার ক্ষোভ আর দাবী নিয়ে লেখাগুলো সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্নভাবে ক্ষোভের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
কলেজ শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়, রাজধানী ঢাকার সাইন্সল্যাব ও সিটি কলেজের মধ্যবর্তী সড়কটি যার নামে নামকরণ করা হয়েছে। তার নাম হলো- ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা। তারই নামানুসারে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ব্রীজের নাম গোলাম মাওলা সেতু।
নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে জাজিরা উপজেলার ওপর হয়ে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ১৯৯৬ সালে নড়িয়া উপজেলা সদরে কীর্তিনাশা নদীতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ মিটার দীর্ঘ এই গোলাম মাওলা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে (এলজিইডি)। ১৯৯৮ সাল থেকে নিয়মিত পরিবহন চলা শুরু হয়। কিন্তু, ২০১৫ সালের জুন মাসে ফাটল ধরে একটি পিলার ডেবে যাওয়ায় সেতুটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সে সময়ই বেইলী সেতু বসিয়ে হালকা যানবাহন চলার ব্যবস্থা করা হয়, পরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে এলজিইডি। ২০১৯ সালের মে মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়নি ৩০ শতাংশও। ফলশ্রুতিতে ভোগান্তিতে পড়েছে নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৫ লাখ বাসিন্দা। বিপদসংকুল অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস কিংবা এম্বুলেন্স আসতে চাইলে আসতে হচ্ছে অতিরিক্ত ২৫ কি.মি. ঘুরে সদর দিয়ে। মালামাল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী পরিবহনে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হয়ে আজ ৫ বছর যাবত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বসে আছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। চাইলেই যেকোনো পন্য দ্রব্য ঢাকাতে কম সময়ে পরিবহন যোগে পাঠাতে পারছে না।
নতুন যে সেতু নির্মাণের কাজ ২০১৯ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো তার দৈর্ঘ্য ১৪৫ মিটার এবং নির্মাণ ব্যয় ১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, অথচ আজ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাস চলে আসলেও ব্রীজের তিন ভাগের একভাগ কাজও সম্পন্ন হয়নি।
এভাবে আর কত দিন? প্রতিদিন এই ব্রীজের উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে আমার পরিবারের সদস্যরা, বন্ধুরা, নড়িয়া তথা শরীয়তপুরবাসীরা। যেকোনো দিন ব্রীজ ধসে যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে দায়ভার কার? এমন প্রশ্ন শুধু ধ্রুবের একার নয়, সকলের।