
বেড়ে চলছে শরীয়তপুরে ফিরে আসা প্রবাসীর সংখ্যা। আতংকে রয়েছে শরীয়তপুর বাসি। প্রবাসীসহ করোনা সন্দেহে গত ২৯ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ মার্চ শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩৯৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে বিদেশ আসা ১৪ দিন পার হওয়ার পর ১১৪ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি করা হয়েছে। এখন তারা সাধারন মানুষের মত চলা ফেরা করতে পারবে বলে জানান সিভিল সার্জন। এর ফলে শরীয়তপুরে হোম কোয়ারান্টাইনের সংখ্যা ২৯৭ জন রয়েছে। আর এদিকে সরকারি হিসেব মতে ২৮৭৩ জন বিভিন্ন দেশ থেকে আসলেও মাত্র ৩৯৭ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন। তারা বলছেন তাদের খুজে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হবে।সরকারি বেসরকারি ভাবে মানুষের মাঝে জেলা পর্যায় চলছে সচেতনতা মুলক লিফলেট বিতরন। আর এদিকে গানে গানে করোনা সচেতনতায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। তাদের গানে গানে করোনা সচেতনতা প্রতিদিন চলছে বিভিন্ন হাট বাজার ও পথ ঘাটে।
শরীয়তপুরে জেলার মানুষ বেশির ভাগ ইতালির প্রবাসি হওয়ায় জেলার মানুষ আতংকে দিন পার করছে। প্রবাসীদের অধিকাংশই ইতালি থেকে এসেছেন এবং যাদের বেশিরভাগই নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা। তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা বিদেশ ফেরত অধিকাংশ প্রবাসীই মানছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা। তারা বাড়িতে না থেকে হাটবাজারে ঘুরছেন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন আর মিশছেন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে। অনেকেই আবার বাড়িতে না গিয়ে থাকছেন জেলার বিভন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে। এতে প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার ও এলাকাবাসী।
নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা আজাহার বেপারী বলেন, যারা ইতালি থেকে এসেছেন তারা স্বাস্থ্য বিভাগের কথা মানছেনা তারা নির্বিঘ্নে ঘুরছেন, তাদের নিয়ে আমরা আতংকের মাঝে আছি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি তাদের যেন আইনের আওতায় এনে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেন।
নড়িয়া উপজেলার আব্দুর রহিম সরদার বলেন, আমরা নড়িয়াবাসী করোনা নিয়ে খুব আতংকের মাঝে আছি এখানে প্রচুর প্রবাসী ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন তারা কেউ হোম কোয়ারান্টাইন মানছেন না, এখানে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিৎ।
নড়িয়া উপজেলার সুব্রত হালদার বলেন, যারা প্রবাস থেকে এসেছে তাদের এবং তাদের পরিবারকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সচেতনতা করা এবং কড়া নজারদারি করা উচিৎ। যদি তারা হোম কোয়ারান্টাইন না মানে তাদের কঠোর আইনের আওতায় আনা উচিৎ যাতে করে এটা বাহিরে ছড়াতে না পারে।
ডামুড্যা উপজেলার মামুন মিয়া বলেন, অনেক প্রবাসী হোম কোয়ারান্টাইন মানছেনা, এদের সরকারিভাবে একটি নির্দিষ্ট যায়গায় ক্যাম্প করে রাখা উচিত, তা না হলে এটা আমাদের জন্য ভয়াবহ আকার ধারন করার সম্ভবনা আছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ব্যবসায়ি সুলাইয়মান বলেন, আমরাই এখন বের হতে ভয় পাই অনেক প্রবাসী পরিচয় গোপন করে হোম কোয়ারান্টাইন না থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে শহরের ভিতরে থাকতেছে, এদের নিয়ে আমরা আতংকের মাঝে আছি, ইচ্ছা করলেও নির্বিঘ্নে চলা ফেরা করতে পারছিনা। বাসাবাড়ি মালিকদের প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে আনার দাবি জানাচ্ছি যদি কেউ বাসাবাড়ি ভাড়া দেয়, তারা যেন তাদের পুরো পরিচয় নিয়ে প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট দিয়ে বাসাবাড়ি ভাড়া দেয়।
সিভিল সার্জন অফিসের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রশিদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৯ ফেব্রুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত ২৮৭৩ জন বিভিন্ন দেশ থেকে আসলেও ৩৯৭ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকীদের তালিকা দেখে তাদের খুজে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. এস.এম. আব্দুল্লাহ্ আল মুরাদ জানান, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঁচ শয্যার ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ শয্যার করে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ৩৭৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে বিদেশ আসা ১৪ দিন পার হওয়ার পর ৯১ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি করা হয়েছে।বর্তমানে ২৮৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টানে রাখা হয়েছে।