আজ মঙ্গলবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলার ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলার ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা

প্রথম শহীদ মিনারের রূপকার ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলার ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৭ সালের ২৯ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বাংলাদেশে ভাষা সৈনিকরূপে যাঁরা খ্যাত শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান ডা. গোলাম মাওলা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ডা. গোলাম মাওলার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় ছাত্র সংসদের আহবায়ক এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের (১৯৫১-৫২) সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর ডাকেই সারা দিয়ে শরীয়তপুরে শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। নির্মাণ করা হয়েছিল প্রথম শহীদ মিনার।

১৯২০ সালের ২০ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার পোড়াগাছা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন এ সৈনিক। পিতা আলহাজ্ব আবদুল গফুর ঢালী এবং মাতা ছুটু বিবি।

গোলাম মাওলার শিক্ষা জীবন শুরু হয় জাজিরা উপজেলার পাচুখার কান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে নড়িয়া বিহারী লাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪১ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯৪৩ সালে বিএস.সি পাস করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূ-তত্ত্ব বিদ্যায় এমএসসি প্রথম পর্ব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রাবস্থায় গোলাম মাওলা কলকাতায় মুকুল ফৌজের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী। তিনি ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

গোলাম মাওলা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ঐ বছরের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে ১৫০ নম্বর মুগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ কর্মশিবির অফিসে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন এবং ২১ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গোলাম মাওলা বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ঘোষণার পরপরই গোলাম মাওলার নেতৃত্বে মেডিক্যালের ছাত্ররা একত্রিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলে গুলিবর্ষণের পর আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের জন্য আন্দোলনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ রাতে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মিলিত হন। এ বৈঠকে ছাত্র সংগ্রাম কমিটি নতুনভাবে গঠিত হলে গোলাম মাওলা কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন।

ছাত্রজীবন শেষে গোলাম মাওলা মাদারীপুরে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। এ সময় তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। গোলাম মাওলা মাদারীপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালের উপ-নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য  নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের হুইপ ছিলেন।

চিকিৎসক হিসেবে গোলাম মাওলা ছিলেন মানবতাবাদী ও নিবেদিত প্রাণ। গরীব রোগীদের তিনি বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন। গোলাম মাওলা তাঁর উপার্জিত অর্থের অধিকাংশই ব্যয় করেছেন সংগঠন ও সেবামূলক কাজে। গোলাম মাওলা ১৯৬৭ সালের ২৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।

স্মৃতি রক্ষার্থে নড়িয়া কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির নামকরণ হয়েছে ডাঃ গোলাম মাওলা সেতু। শরীয়তপুর জেলার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার পোড়াগাছা গ্রামে গোলাম মাওলা সড়ক, নিজ বাড়ির কাচারী ঘরে ডাঃ গোলাম মাওলা স্মৃতি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।  ২০১০ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।