
শরীয়তপুরের পদ্মার চরাঞ্চলের চরআত্রা ইউনিয়নের ও জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের সিডার চর এলাকায় বেশ কিছু অংশে শুরু হয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন। প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতভিটা। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের ও জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের সিডার চর এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতভিটা।
গত দুইদিনের নদী ভাঙ্গনে চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি একতলা ও একটি দোতলা ভবন ইতিমধ্যে সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখানকার মাটি বালু হওয়ায় এবং পানির স্রোত বেশি হওয়ায় দ্রুত নদী ভাঙছে। মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার সময় টুকু পাচ্ছে না। একদিকে বর্ষা একদিকে করোনা এবং এখন শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন সবমিলিয়ে ব্যাপক সমস্যাগ্রস্ত অবস্থায় জীবন যাপন করছে এসব এলাকার মানুষ।
আজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ কার্যক্রম অব্যাহত রেয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করে আমাদের সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া এই চরাঞ্চল কে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে বেরিবাধের কাজও চলমান রয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গনকবলিত ১৫০ পরিবারকে তাৎক্ষণিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা শাড়ী লুঙ্গি ও ২০ কেজি করে চাল দিয়েছি। কিছুদিন পরে এই ভাঙ্গনকবলিতদের ঢেউটিন ও টাকা ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
অপরদিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর কাচিকাটায় এবং জাজিরা উপজেলায় জিরো পয়েন্ট থেকে পদ্মাসেতু রক্ষা বাঁধ প্রকল্প পর্যন্ত নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
ভাঙ্গনের দিশেহারা সবুজ বলেন, আমাদের চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চড়ে কয়েকদিন যাবত অনেক নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমাদের এলাকার মাটির বেলে হওয়ায় অতি অল্প সময়ে অনেক বেশি জায়গা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যার কারণে আমরা বা আমাদের এলাকার লোকজন তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার মতো সময় টুকু পায় না। অনেকের বাড়িঘর নদীতে নিয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের বাড়ির সামনে বসা ক্ষেত্রের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গতকালকে সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে দুটি পাকা ভবন ছিল। একটি একতলা বিশিষ্ট ভবন এবং আরেকটি দুই তলা ভবন তাও গতকালকে নদীগর্ভে চলে গেছে।
ভাঙ্গন কবলিত আজিজুল হাওলাদার জানান, আমাদের বাড়িঘর গতকালকে নদীগর্ভে চলে গেছে। কিছু মাল সামানা সরাতে পারলেও অনেক কিছুই সরিয়ে নিতে পারিনি। এত তাড়াতাড়ি নদী ভাঙ্গে যে কিছু সরানোর সময় পাইনা। তারমধ্যে ঘর-দুয়ার ভাঙ্গানিয়া যে স্থানে রাখবো এরকম জায়গাও নাই। সব জায়গায় পানি। এখন ঘর দুয়ার ভেঙে পানির মধ্যে নিয়ে কোনমতে রেখেছি আমরা খোলা আকাশের নিচেই কাটাইতেছি। বৃষ্টি আসলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। অনেক সমস্যা আছে আমরা সরকার যদি আমাদের দিকে নজর দিতে তাহলে হয়তো আমরা ভালো থাকতে পারতাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, বেশ কয়েকদিন যাবত নড়িয়া জাজিরা ভেদরগঞ্জ ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এদিকে নড়িয়া উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল চতরা ইউনিয়ন গতকাল একটি বিদ্যালয় দুইটি ভবনসহ পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন রোধে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে আমরা যুবক ডাম্পিং কার্যক্রম চালু রেখেছি। কিন্তু নদীর স্রোত বেশি এবং বালুমাটি হওয়ায় বস্তা সরে যাচ্ছে, রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষায় প্রায় ৭০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।