
লিখার শুরুতেই দ্বিধায় পরে যাই ফেস্টুন আর ফেষ্টুন বানানটা নিয়ে। কারণ বাংলা একাডেমি যেভাবে বানান পরিবর্তন করছে তাতে যেকোনো বানান লিখার পূর্বে অগত্যাই দ্বিধা দ্বন্ধে পরতে হয়। সেই দ্বিধা অতিক্রম করেই নাম দিয়ে দিলাম ‘ফেস্টুননামা’। বাবরনামা’র মতো ফেস্টুনের বাস্তব কাহিনীভিত্তিক লিখাও ভাবতে পারেন এটাকে আবার চাইলে ফেস্টুনকে নামানো অর্থেও নিতে পারেন লিখাটি।
যাই হোক ইদানীং কালে কোনো দিবস কিংবা রাজনৈতিক ইভেন্ট আসলেই দেখা যায় অলি গলি ছেয়ে যায় পোস্টারে। কিছু কিছু ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড দৃষ্টিনন্দন হলেও অধিকাংশই দৃশ্যদূষণ ঘটায়। রাজনৈতিক মতবাদ প্রচারের উছিলা দিয়ে পুরো এলাকার গাছপালা, দেয়াল, ভবন, রাস্তা-ঘায় ছেয়ে যায় এইসব ব্যানার, পোস্টারে।
চার ফিট বাই তিন ফিটের মাঝারি সাইজের একটা ফেস্টুনের মধ্যে ১৫/২০ জনের ছবি এলোমেলো ভাবে উপরে নিচে করে যেভাবে সাটানো হয় সেই ধরণের ব্যানার, পোস্টারের আদৌ ভালো নাকি মন্দ তা বুঝি আমরা অধিকাংশ লোকই কিন্তু করিনা কিছুই। চোখে পরে না তেমন একটা আইনের প্রয়োগও।
স্বভাবতই ডিজিটাল ব্যানার আসায় আমাদের কষ্টটা কমে গেছে। যেকোনো প্রোগ্রামে অনায়াসে আমরা একটা সুন্দর গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যানার বানাতে পারি। যা একটি প্রোগ্রামকে আকর্ষণীয় করে তোলে। কিন্তু সব ডিজিটাল সিস্টেমেরই কিছু অসুবিধা তৈরি হয়ে যায়। যেমনটি দেখা যায় রাস্তাঘাটের ব্যানার, পোস্টারে।
এবারে কথা হচ্ছে কেনো করা হয় এগুলো?
উত্তরটা সহজ- নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরা। নিজের ছবি বা আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে উপরে সম্মানিত নেতাদের ছোট ছোট ছবি দিয়ে অসম্মানিত করে নিজের বড় ছবি দিয়ে বানানো হয় এগুলো। উদ্দেশ্য একটাই সবাই দেখবে এবং তাকে চিনবে।
কিন্তু এতে লাভ কতটুকু হয়? মূলত কোনো লাভ নেই। বিশ্বাস করেন বুক হাত রেখে বলছি রাস্তাঘাটের ওই দৃষ্টিকটু ব্যানার পোস্টার ৯০ভাগ মানুষ পড়েন না (নির্বাচনী পোস্টারের হিসেব ভিন্ন)। কারণ যেভাবে হিবিজিবি করে ডিজাইন করা হয় তা কারো পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত করেনা। সুতরাং একথা পরিষ্কার হয় যে, যে উদ্দেশ্যে ওগুলো বানানো হয় তা সফল হয় না।
এবারে কথা হচ্ছে লাভ হয় না ঠিকাছে কিন্তু কোনো ক্ষতি কি হয়? জ্বী অবশ্যই ক্ষতি হয় অনেক।
প্রথমত অপ্রয়োজনীয় টাকা খরচ হচ্ছে এখানে। একটা ব্যানারের পিছনে যে টাকা খরচ করছেন আপনি আত্মপ্রচারের জন্য বিশ্বাস করেন সেই টাকা দিয়ে আপনি একজন অসহায়কে সাহায্য করেন, ওই অসহায় আপনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে। দ্বিতীয়ত ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডের ফ্রেম বানাতে সাধারণত ব্যবহৃত হয় কাঠ। বাংলাদেশে বৃক্ষের পরিমান এমনিতেই কম। আবার এইসব ফ্রেমের জন্য প্রচুর পরিমানে গাছ অপচয় হচ্ছে। পরিবেশ ঝুঁকির জন্য দায়ী হয়ে যাচ্ছে এসব ব্যানার, ফেস্টুন।তৃতীয়ত পোস্টার, ব্যানারগুলোর ডিজাইন সাধারণত দৃষ্টিনন্দন হয় না। ফলে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। পাশাপাশি চলাচলেও অনেকসময় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এগুলো। চতুর্থত বর্তমানে যে ব্যানার বানানো হয় তা হয় প্যানা নতুবা পিভিসি স্টিকার ধরণের। প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলি, আমাদের মন্ত্রী-সচিবরা বলেন অথচ সেই আমরাই প্লাস্টিক ব্যবহার করছি ব্যানার পোস্টার বানাতে; যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ব্যানার পোস্টার যেখানে সেখানে পরে থাকে। বিশেষ করে শহর এলাকায় দেখা যায় এগুলো ছিঁড়ে ম্যানহোলের ঢাকনা বন্ধ হয়ে রয়েছে।
এ ধরণের অসংখ্য ক্ষতিকর দিক আপনি নিজেই ভাবলে বের করতে পারবেন।
এবার আসা যাক এ ব্যাপারে তাহলে রাষ্ট্রের নীতি কি? প্রশ্ন জাগেনা মনে? জ্বী এই ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন নিয়েও নীতিমালা রয়েছে। সেটি হচ্ছে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২।
এ আইনে সুস্পষ্টভাবে দেওয়া আছে কোন বিষয়ে কোথায় ব্যানার, বিলবোর্ড বানাতে প্রশাসনের অনুমতি লাগবে এবং কোথায় লাগবে না।
আইনে এটিও উল্লেখ আছে; কোনো সুবিধাভোগীর অনুকূলে উক্ত আইনের ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগাইলে উক্ত অপরাধের জন্য উক্ত সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে অন্যূন ১০(দশ) হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে, অনাদায়ে অনধিক ৩০(ত্রিশ) দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত সুবিধাভোগীকে তাহার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলিবার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করা যাইবে।
এ পর্যন্ত সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যায় ফেস্টুননামার মূল কথা। তবে এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। এতোকিছুর পরেও অনেকের কাছেই মনে হতে পারে প্রচার প্রচারণায় ব্যানার, ফেস্টুন একেবারেই খারাপ কি? আমিও খারাপ বলছি না, তবে আমাদের খেয়াল করা উচিত সময় মতো যেনো সেগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং এর পাশাপাশি যে ব্যানার, ফেস্টুন বানানো হবে সেটি যেনো দৃষ্টিনন্দন হয়।
অনেকে এটিও ভাবতে পারেন যে ব্যানার, ফেস্টুন বানানো বন্ধ করে দিকে প্রিন্টিং প্রেস চলবে কিভাবে? সে ভাবনা যদি ভেবেই থাকেন তবে কি সিগারেট কোম্পানির মালিকের পেট চালানোর কথা ভেবে আমরা সিগারেট খাওয়া চলমান রাখবো? তাছাড়াও আগে যখন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে লিখা হতো কিংবা দেওয়ালে দৃষ্টিনন্দন চিকা করতেন আর্ট শিল্পীরা তারা কি এখন না খেয়ে মরে যাচ্ছে? অবশ্যই না, সবাই বিকল্প কিছু না কিছু বের করছেই। মূলকে না ভেবে শাখা-প্রশাখার দিকে গেলে কোনো কিছুই টেকসই হয় না।
পরিবেশ হোক দৃষ্টিনন্দন, পৃথিবী ফিরে পাক সজীবতা
-সুপ্রিয় সায়্যিদিন, শিক্ষার্থী, ZHSUST