আজ শনিবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অত্যাধুনিক দুটি যুদ্ধ জাহাজ উদ্বোধন করলেন রাষ্ট্রপতি

বাংলাদেশ অত্যাধুনিক দুটি যুদ্ধ জাহাজ এবং সাবমেরিনের জন্য নির্মিত দুটি টাগবোট যুক্ত হচ্ছে। প্রায় আটশ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক এই জাহাজ ও টাগবোট নির্মাণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা দিতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ ‘নিশান’ ও ‘দুর্গম’ তৈরি করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।

দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি এই লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফটের উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এ উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে খুলনার খালিশপুরে তিতুমীর নেভালে যুদ্ধ জাহাজ ও টাগবোর্ড কমিশনিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

১৯৯৯ সালে ৩ নভেম্বর আওয়ামীলীগ সরকার খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কাছে হস্তন্তর করে। আর তখন থেকে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ কারখানা হিসেবে গড়ে তোলে খুলনা শিপইয়ার্ডকে।

২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডে সর্বপ্রথম দেশের মাটিতে ৫টি যুদ্ধ জাহাজ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণের কিল লেইং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

২০১৩ সালের মধ্যে সেই পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে এই প্রতিষ্ঠানটি। নৌবাহিনীর জন্য লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নামের দুটি যুদ্ধ জাহাজ চীন থেকে আমদানি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে শিপইয়ার্ডের পক্ষ থেকে খুলনায় জাহাজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সুপারিশে এলপিসি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় দেশের জাহাজ তৈরীর কারখানা শিপইয়ার্ডকে। জাহাজ নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের ৩০ জুন নৌবাহিনীর সঙ্গে খুলনা শিপইয়ার্ডের চুক্তি হয় । প্রতিটি জাহাজের নির্মাণ জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এই ধরনের দু’টি এলপিসি চীন থেকে তৈরি করে আনতে প্রায় এক হাজার কোটি।

খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর আনিছুর রহমান মোল্লা জানান, ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয় দেশে জাহাজ নির্মাণের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

খুলনা শিপইয়ার্ডে-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর ২৪ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মাণ শেষ হয়েছে দেশে নির্মিত প্রথম এন্টি সাবমেরিন লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট দুটির। ইতোমধ্যেই দুর্গম ও নিশান নামের জাহাজ দুটি নদী ও সমুদ্রে পরীক্ষামূলক চলাচল শেষ হয়েছে।

খুলনা শিপইয়াড লিমিটেডের এলপিসি জাহাজ প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তা কমান্ডার এম আর রাশেদ বলেন, বড় আকারের অত্যাধুনিক লার্জ পেট্র্রোল ক্রাফট প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার এবং প্রস্থ ৯ মিটার। এর গভীরতা ৫ দশমিক ১০ মিটার। সমুদ্রপথে ঘণ্টায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলবে। জাহাজে ৭০ জন একসাথে থাকতে পারবেন। চীনের যুদ্ধজাহাজ বিশেষজ্ঞরা এতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিয়েছেন। লার্জ পেট্রোল ক্রাফট হলেও এগুলোতে অধিকাংশ সুবিধা থাকবে। থাকবে স্বয়ংক্রিয় মিসাইলসহ অত্যাধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র। আরও থাকবে একটি মাল্টি রোল গান, একটি সিঙ্গেল ব্যারেল গান, দুটি ট্রিপল টুবার টর্পেডো লঞ্চার, দু’টি নেভিগেশন রাডার, একটি এয়ার অ্যান্ড সারফেস সার্চ রাডার, একটি ট্র্যাকিং রাডার এবং একটি হাল মাউন্টেড সোনার থাকবে। এই এলপিসি শত্রুপক্ষের সাবমেরিন সনাক্ত এবং তার ওপর আক্রমণ করতে সক্ষম। এটি দিয়ে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় টহলও দেয়া যাবে।

তিনি আরো জানান, দেশে তৈরি এই জাহাজ দুটি কমিশনিং-এর (সংযুক্তির) মাধ্যমে নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়বে। আধুনিক সমরাস্ত্র-সজ্জিত এই জাহাজ যুক্ত হয়ে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী