
গোসাইরহাটের দাশেরজঙ্গল বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও পাশ্ববর্তী একটি বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতদল অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ ছয় লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ঘটনাটি বুধবার দিবাগত আনুমানিক রাত ২-৩টার মধ্যে সংঘঠিত হয়। পাশাপাশি কয়েকটি চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটায় আতঙ্কে রয়েছে বাজারের ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সুত্র জানায়, গোসাইরহাট সদরস্থ দাশেরজঙ্গল বাজারের পাশে নাসির উদ্দিন পন্ডিত এর একটি দ্বিতল বিশিষ্ট বিল্ডিং এর নীচতলায় ভাড়া থাকেন স্থানীয় শামসুর রহমান কলেজের শিক্ষক দম্পতি। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল, রাত আনুমানিক দুইটার দিকে কলাপসিবল মূল গেইটের তালা ভেঙে পাঁচ থেকে ছয় সদস্যের মুখোশ পরিহিত একটি ডাকাতদল কক্ষে প্রবেশ করে দড়ি দিয়ে বেধে মোবাইল ফোন গুলো নিয়ে যায়। পরে আলমারীর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ দুই লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। দ্বিতীয় তলায় বাড়ীওয়ালা, তার দুই সন্তানকে বেধে একই কায়দায় নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কারসহ তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে ডাকাত দল তিনটার দিকে চলে যায়।
এদিকে দাশেরজঙ্গল বাজারের রুপা ফার্মেসীর স্বত্ত্বাধীকারী এস,এম রুহুল আমিন নামক এক ব্যবসায়ী অন্যান্য দিনের মত এসে তালা খুলে দেখেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিন্ধুকের তালা ভাঙ্গা ও আসবাবপত্র এলোমেলো, ভাঙাচুড়া। দোকানের পিছনের ভেনটিলেটর ভাঙা। লক্ষাধিক নগদ টাকা রেখে ছিলেন সিন্ধুকে। সেখানে সেই টাকা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দাশেরজঙ্গল বাজারটি অনেক বড় একটি বাজার। এই বাজারটি বরিশালের সীমান্তবর্তী হওয়ায় পাশর্^বর্তী মুলাদী ও হিজলা উপজেলার লোকজন এখানে ব্যবসার কাজে আসেন। গত ১৪ মার্চ ২০১৬ তে বাজারে একটি ডাকাতি সংগঠিত হয়। সেই সময় জননী স্বর্নালঙ্কার ভবন, আরকে গিনি হাউস সোনার দোকানসহ দুটি মোবাইল দোকানে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতরা। ঐ ডাকাতি মামলায় পুলিশ চার্জশীট দেয় বিশ জনের নামে। আটজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বারোজনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বাজারটি থানা থেকে অর্ধ কিঃ মিঃ দূরত্বে। আর ডাকাতিগুলো সংগঠিত হচ্ছে থানা থেকে এক কিঃ মিঃ দূরত্বের মধ্যে। বাজারে ডাকাতি হওয়ার পরপরই ব্যবসায়ী আঃ মান্নান হাওলাদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, মোঃ ওয়াহিদুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, মোস্তফা পাইকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, মঞ্জুর বেপারীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, আলী বক্স জমাদারের বাড়ী ও আলো সরদার নামক এক ব্যক্তির বাড়ীতে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ডাকাতিগুলো হয়। বাজারটিতে নির্বাচিত কোন প্রতিনিধি নাই, বণিক সমিতি নাই এবং রাত্রীকালীন পাহাড়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়শই চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে।
বাড়ীতে ডাকাতি হওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, ডাকাতি মামলা করলে উল্টো আমরাই আরও সমস্যায় থাকি। স্বাক্ষী নিয়ে ঝামেলা। বাড়ীতে আমরা বুড়াবুড়ি দুজন ছেলেরা থাকে বাইরে। সুতরাং কোন ঝামেলায় পড়তে চাইনা।
ভুক্তভোগী শিল্পি বেগম বলেন, বৃষ্ঠি হচ্ছিল, রাত্রি দুইটার দিকে মুখোশ পড়া ডাকাতদল আমার বাড়ীর লোহার দরজা ভেঙে ডুকে তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
বাজারের বণিক সমিতির সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ও ব্যবসায়ী আঃ আউয়াল সরদার বলেন, বাজারে রাত্রীকালীন পাহাড়াদার না থাকায় চুরি ডাকাতির মত ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
বাজারের বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন স্বপন বলেন, আগের ডাকাতি মামলায় দৃশ্যমান কোন বিচার না হওয়ায় অহরহ ঘটনা ঘটছে। সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করলে ডাকাতির ঘটনা বাজারে ঘটবে বলে মনে হয়না।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি মাসুদ বলেন, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা অপরাধীদের ধরার জন্য তৎপর আছি।