
পৌষ ও মাঘ মাস শীতের মৌসুম হলেও বৈষিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে হেমন্তেই শীতের আগমন ঘটে। শীতের আগমনকে সামনে রেখে তাই ব্যস্ততা বেড়ে গেছে শরীয়তপুর জেলার লেপ-তোষক কারিগরদের।
স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন আগে-ভাগেই শীতবস্ত্র ক্রয়ের পাশাপাশি লেপ-তোষক সংগ্রহ করছেন। তাই লেপ-তোষক তৈরীর কারিগর দোকানে বেড়ে গেছে ক্রেতাদের ভীড়।
শরীয়তপুর জেলার ৬ টি উপজেলায় মোটামুটি ঝেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। এবং আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। রাত শেষে ভোরে আলো ফুটলেও কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকে চারপাশ। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত শীত অনুভব হলেও গত বেশ কিছু দিন যাবত শীতল ঠান্ডা হাওয়া বইছে।
সন্ধ্যা হলেই গরম কাপড় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে। সব মিলিয়ে বর্তমান আবহাওয়া তীব্র শীতের আগাম বার্তা জানাচ্ছে।
শীতের প্রস্তুতি হিসেবে আগেই লেপ-তোষক তৈরির অর্ডার দিয়ে রাখছেন অনেকে। জেলা সদর সহ উপজেলার লেপ-তোষকের দোকান ঘুরে এমন প্রস্তুতির চিত্রই দেখা যায়।
শরীয়তপুরে বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লেপ-তোষক তৈরির কারিগরদের ব্যবসায়ীক মৌসুম শীতকাল হওয়ায় নিজেদের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যস্থ সময় পার করছে তারা।
আর সাধারণ মানুষ শীত থেকে রক্ষা পেতে অগ্রিম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ-তোষক তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার লেপ তৈরির কাপড় ও তুলার দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এতে উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের ক্রয় সাধ্যে হলেও নিম্ম আর ছিন্নমুল মানুষের জন্য হয়ে পড়েছে ভোগান্তি।
একদিকে শীত মৌসুম, অন্যদিকে কম-বেশী বিয়ের ধুম। তাই লেপ-তোষক কারিগরদের বিরামহীন কর্মব্যস্ততা। অনেকে পুরাতন লেপতোষক ভেঙ্গে নতুন ভাবে বানিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ নতুন তুলা দিয়ে নতুন ভাবে তৈরী করছেন। দোকান গুলোতে তৈরি করা লেপ-তোষকের সাজানো সারি। অন্যদিকে গুদামে রয়েছে তুলাসহ অন্যান্য উপকরণ।
জাজিরা উপজেলার লেপ-তোষক তৈরির কারিগর হাসান মাহমুদ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার কাপড় ও তুলার দাম বেশি। এ কারণে লেপ-তোষক তৈরিতে অতিরিক্ত টাকা লাগছে। বর্তমানে প্রকার ভেদে লেপ-তোষক তৈরির কাপড় প্রতি গজে ১০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে।
ডামুড্যা বাজারের লেপ-তোষক কারিগর হাবিব খান বলেন, এবার প্রতিবারের তুলনায় কাজ কম। মানুষ এখন লেপ- তোষকের পরিবর্তনে তার ফোম আর কম্বলের কদর বাড়ে চলছে।
নড়িয়া বাজারের লেপ কারিগর আ. ছালাম জানান, শীত এখনো জেকে না বসলেও অনেকেই আগে-ভাগে লেপ বানাতে আসছেন। গত বছরের চেয়ে এ বছর ক্রেতার সংখ্যা অনেক। ফলে কাজ বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের খাবার সন্ধ্যায় এবং রাতের খাবার প্রায় রাত ১টায় খেতে হয়। তবুও মৌসুমের কারণে এবং মালিকের ব্যবসার দিকে চেয়ে কাজ গুলো পুষিয়ে দিতে হচ্ছে। মালিকও আমাদেরকে এ ব্যবসার উপর ভর করে সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন।
ভেদরগঞ্জ বাজার লেপ কারিগর ওয়াহেদ মিয়া বলেন, বছরের প্রায় নয়টি মাস অলস সময় পার করতে হয়। শুধু শীতের তিন মাস ব্যস্ত সময় পার করতে হয়।
জেলার পালং উপজেলার লেপপট্রিতে মোহম্মাদ হাসান খান লেপ তৈরির অর্ডার দিতে এসে বলেন, সারা দিনে হালকা কাপড় পড়লেও সন্ধ্যার পর গরম কাপড় পড়তে হয়। আর বর্তমানে রাতে কাঁথা বা চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে হয়। কয়েকদিন আগেও রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়েছে। এবার শীতের শুরুতেই যে দাপট দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে প্রচুর ঠান্ডা পড়বে। তাই শীতের অগ্রিম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ তৈরির অর্ডার দিতে এসেছি।
দোকান মালিক আলম খান জানান, সারা বছরের চেয়ে এই তিন মাস বেচা কেনা একটু বেশি। তাই গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে কাজের গুনগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি।
লেপ তৈরী করতে আসা শামিম বিশ্বাস জানান, এখনও শীতের দেখা না মেললেও আগে ভাগেই শীতের জন্য একটি লেপ বানিয়ে নিচ্ছি।
ডামুড্যা বাজার ব্যবসায়ী সোহান ঢালী বলেন, কিছুদিন পুর্বে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাই মেয়ের জন্য লেপ ও তোষক বানাতে দিয়েছেন। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর তুলা ও কাপড়ের দাম অনেক বেশী। মেয়ের সুখের জন্য এ কষ্টকে এখন কষ্ট মনে হচ্ছে না।
গোসাইরহাট উপজেলার এনজিওকর্মী জাকির হোসেন জানান, শীত আসলেই লেপ তোষকের দোকানে ভীড় লেগে থাকে। তবে এ বছর লেপ’র যে দাম তাতে গরীব, ছিন্নমুল মানুষের লেপ বানানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।
এবার শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৪শ থেকে ৪৫০ টাকা, কার্পাস তুলা প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩শ টাকা, প্রতি কেজি কালো হুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কালো রাবিশ তুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, সাদা তুলা ৯০ থেকে ১শ টাকা করে দাম চলছে। আকার অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরিতে ৩শ টাকা থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত মজুরি নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে একটি ভালো মানের লেপ তৈরি করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া ভালো মানের তোষক তৈরিতে গত বছর দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাগলেও এবারে তা বেড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা হয়েছে।