আজ বৃহস্পতিবার, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বেরীবাঁধের দাবীতে নড়িয়ায় সকাল-সন্ধা গণঅবরোধ পালিত

ইলিয়াছ মাহমুদ ॥ শরীয়তপুরের নড়িয়ায় বুধবার (০৪ এপ্রিল) সকাল-সন্ধা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে পদ্মার ভাঙন কবলিত মানুষ। পদ্মার ডান তীর সংরক্ষণে বেরীবাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসন প্রকল্পটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ণ এবং আগামী বর্ষার আগেই কাজ শুরুর দাবীতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

সকাল থেকেই নড়িয়া-শরীয়তপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে সাধারণ মানুষ। এতে জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে উপজেলা। ব্যাবসায়ীরাও স্বতষ্ফুর্তভাবে এ কর্মসূচি পালন করে। পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী নড়িয়া বাজারের সকল দোকান-পাট বন্ধ ছিল। ব্যাংক-বীমা ও সরকারি অফিস-আদালতগুলো নামমাত্র খোলা হলেও জনসাধারণের অনুপুস্থিতিতে এগুলো ছিল প্রাণহীন। মূলত অবরোধে জনগনের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহনে কার্যত অচল হয়ে পরেছিল সব কিছু।

সকাল ১০টার দিকে নড়িয়া বাসস্টান্ডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আবুল বাশার দেওয়ান, বর্তমান সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাদশা শেখ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জাকির বেপারী, কেদারপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান, ভিপি মোস্তফা শিকদার, মাষ্টার ওবায়দুল হক, মাষ্টার সাইদুল হক মুন্নাহ সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

সমাবেশ থেকে বক্তারা সরকারের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাদের মৌলিক অধিকার বাসস্থান রক্ষা করা সরকারের কর্তব্য। আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি। আমরা কোন দয়া-ভিক্ষা চাইনা। আমরা আমাদের অধিকার চাই। বিগত কয়েক বছর ধরে শুধু ভাঙনের ফলে জনগন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু এবছর ভাঙনের কবলে উপজেলা পরিষদ সহ প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। অনতিবিলম্বে একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবী জানান তারা। না হয় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারীও দেন বক্তারা।

প্রসঙ্গত গত দুই বছরে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ৮ হাজার বসত বাড়ি, ১৮৫ কিলোমিটার সড়ক, ১ কিলোমিটার সুরেশ্বর রক্ষা বাধ, ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৫ মসজিদ মাদরাসা সহ প্রায় ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার সম্পদ। এ ক্ষতি এড়াতে জাজিরা-নড়িয়া পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গত ২ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ ও চর ড্রেজিং করা হবে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এ প্রকল্পের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। শুস্ক মৌসুমে বাধ নির্মান করা না গেলে আগামী বর্ষায় নড়িয়া উপজেলা সদর বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেরীবাধ নির্মানের দাবী জানিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা।