
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ৩ নং ধীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিশ্বনাথ নন্দির বিরুদ্ধে শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পেয়েও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে গরিমশি করে। বিষয়টি গণমাধ্যম পর্যন্ত গড়ালে বুধবার সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করেছেন।
নির্যাতনে শিকার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিশ্বনাথ নন্দি ও তার স্ত্রী মিলে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করে। যে সকল শিক্ষার্থী তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে রাজি না হয় তাদের শ্রেণী কক্ষে সকল শিক্ষার্থীদের সামনে গালমন্দ সহ শারিরিক নির্যাতন করে। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন বিশ্বনাথ নন্দি। শিক্ষার্থীদের শরীরের গঠন অনুযায়ী বিকৃত নামেও ডাকেন ওই শিক্ষক। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহকারি শিক্ষক বিশ্বনাথ নন্দির বিরুদ্ধে গোসাইরহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও ওই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়া গরিমশি শুরু করেন। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে এলে গত মঙ্গলবার সকালে ৩ নং ধীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শণ করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। ওই সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষক কর্তৃক নির্যাতনে অভিযোগ করে। বিশ্বনাথ নন্দির প্রাইভেট পড়ানোর টাকার হিস্যা প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারাও পেয়ে থাকেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্বনাথ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি না তাই আমাদের ক্লাশ থেকে বের করে দেয়। ডাষ্টার ধরে মাথায় মারে। কেউ কালো হলে তাকে মা-কালি, কেউ লম্বা হলে তাকে লম্বু, কেউ খাটো হলে স্যারে তাকে বেটে বলে ডাকে। যত ধরনের গালিগালাজ আছে তা সবই বলে। আবার বলে তোরা স্কুল থেকে বের না হলে তোদের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলব। স্যারের কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের কিছুই বলে না। প্রধান শিক্ষককে বারবার বিষয়টি বলেছি। সে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। তাই উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে বিচার দেই। অফিসের স্যারে লিখিত অভিযোগ করতে বলে। আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি।
অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক বিষয়টি অস্বীকার করে বলে, প্রাইভেট নিসিদ্ধ আইন হওয়ার পর আমি প্রাইভেট পড়াই না। আমার স্ত্রী বাসায় কিছু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ায়। আমি কোন শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করি না বা নির্যাতনও করি না। অর্পিত জমি নিয়ে আমার সাথে এলাকার কতিপয় লোকজনের মামলা আছে। তাই শিক্ষার্থীদের আমার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। শুনেছি শিক্ষা অফিসে গিয়ে অভিযোগ করেছে।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. রিপন মিয়া বলেন, বিষয়টি তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করব।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি আমাকে দেয়ার জন্য বলা আছে। বিষয়টি প্রমাণ হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।