
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনায় নিহত শরীয়তপুরের মির্জা আতিকুর রহমান (৩৮) এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আতিকুরের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের পূর্বসারেঙ্গা গ্রামে। শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে মরদেহ শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। দুপুর দুইটার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পূর্ণ হয়।
আতিকুর এফআর টাওয়ারের ১৩ তলায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন মির্জা আতিকুর রহমান (৩৮)। বৃহস্পতিবারের অগ্নিকান্ডে ভবনে আটকে পরে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তার।
এদিকে আতিকুরের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে মাতম করছেন মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের পূর্বসারেঙ্গা গ্রামের মৃত মির্জা আব্দুল কাদিরের ছেলে মির্জা আতিকুর রহমান। চাকরির সুবাদে ১৫ বছর আগে স্ত্রী, দশ বছর বয়সি মেয়ে মির্জা তাসফিয়া আক্তার তানহা ও চার বছরের ছেলে মির্জা রাফিউর রহমানকে নিয়ে ঢাকার এসিবি চত্বর মানিকদি বাজার আমতলিতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। মেয়ে কেন্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আতিকুর স্ক্যানওয়াল লগিস্টিক বাংলাদেশ (প্রা:) লি: কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এফআর টাওয়ারের ১৩ তলায় অফিস ছিল তার। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে এফআর টাওয়ারের ৯ম তলা থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হলে হয়, তখন আগুন ছরিয়ে পরলে ওই ভবনের ১৩ তলার অফিসে আটকা পরেন আতিকুর। পরিবার অনেক খোঁজ করে তাকে পায়নি। পরে ওইদিন রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ চিনতে পেরে সনাক্ত করেন আতিকুরের চাচাতো ভাই মির্জা বাদল। পরে শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে মরদেহ শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। দুপুর দুইটার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পূর্ণ হয়।
মির্জা আতিকুর রহমানের স্ত্রী এনি আক্তার পলি বলেন, তখন দুপুর ১টা ১০ মিনিট। আমার কাছে মোবাইলে আতিকুর ফোন করে। আমাকে বলে, আমার জন্য দোয়া কর। তখন আমি বলি কেন একথা বলছো। তখন বলে অফিসে আগুন লাগছে। ধুঁয়ায় অফিস ভরে গেছে। আমি স্বাস নিতে পারছি না। তিনি বলেন, আমার আতিকুর মারা গেছে। সন্তানরা এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে।
মির্জা আতিকুর রহমানের ভাই মির্জা আবুল হোসেন বলেন, এফআর টাওয়ারে আগুন লাগলে ধুঁয়ায় চার দিক অন্ধকার হয়ে যায়। সেই ভবনে আমার ভাই চাকরি করতো। সেদিন অফিসে ছিল, অফিস থেকে বের হতে পারেনি ভাইটা। অক্সিজেনের অভাবে স্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে আমার ভাই। আল্লাহ কেন এমন করলা?
চাচাতো ভাই মির্জা বাদল বলেন, আতিকুর অনেক ভাল ছিল। তার দশ বছরের একটি মেয়ে ও চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে। এভাবে সে মারা যাবে কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যু মানতে পারছি না। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে যাই। লাশ এনে গ্রামের বাড়িতে দাফন করি।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দুর্ঘটনায় শরীয়তপুরের একজনের মৃত্যু হয়েছে শুনেছি। ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। জেলা প্রশাসন নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।