
নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। তিনি বলেন, শিশু এবং যারা যুদ্ধ করতে শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন তারা ব্যতীত সবাই কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধ করেছেন। তাই তাদের তো তালিকা আছেই। যারা অস্ত্র হাতে বিরোধিতা করেছেন সেই আলবদর, রাজাকারদের চিহ্নিত করতে হবে। এটা খুব কঠিন নয়। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘৭১ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মা-বোনদের যে অবদান তা অন্যদের চেয়ে কম নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রাজাকার-আলবদরদের মধ্যে আমি কোনো নারীর নাম শুনিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মা-বোনেরা কেউ রাজাকারের ভূমিকা পালন করেননি। এটা হল আমাদের জনযুদ্ধের অন্যতম আদর্শিক দিক।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা পালনের জন্য ১১ জন নারীকে ‘বীর নারী সম্মাননা-২০১৯’ প্রদান করা হয়। সম্মাননা পাওয়া নারীরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা শ্রীমতী আশালতা বৈদ্য, ড. নীলিমা ইব্রাহিম (মরণোত্তর), মিনু রানী দাস, আসমা নিসার, সাহান আরা বেগম, মিনু হক (বিল্লাহ), ডা. দীপা ইসলাম, সুমি বাসু গী, মোমেলা বেগম, সালেহা বেগম ও মোছা. হাফেজ বেগম। অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধময়দানে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের তালিকা তৈরির করার আহ্বান জানান। শ্রীমতী আশালতা বৈদ্য বলেন, আমরা চাই সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে এই মুষ্টিমেয় রাজাকার-আলবদর-আলশামস ছাড়া বাকি সবাই স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।
সাহান আরা বেগম বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ- তোমরা রাজাকারমুক্ত দেশ গড়বে। তোমাদের মধ্যে যেন মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা থাকে। অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না মোমেলা বেগম। তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন স্বামী মুক্তিযোদ্ধা বাদশা তালুকদার। তিনি বলেন, আমরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। আমি আমার স্ত্রী, আমরা সব কিছু ফেলে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। হাফেজা বেগম বলেন, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি শুধু রাজাকারের বিচার চাই। ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে সালেহা বেগম বলেন, আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা চাই দেশ ভালো থাকুক। এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে শুরু হয়। ৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. খালেদ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী, মমতাজ বেগম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. জেবুন্নাহার এবং কবিতা আবৃত্তি করে শোনান ডালিয়া বসু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার পাশাপাশি যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা বিভিন্ন চিঠি পড়ে শোনানো হয়।