
অনলাইন ডেস্ক: আজ সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সাথে নেমে আসবে অতি পুণ্যময় রাত। দিনের আলো পশ্চিমে মিলিয়ে যাবার পরই শুরু হবে কাঙ্ক্ষিত এই রজনী, পবিত্র শবে বরাত। পাপ থেকে সর্বান্তঃকরণে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে নিষ্কৃতি লাভের অপার সৌভাগ্যের রাত আজ। শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়।
বিশ্বের অন্যান্য আরো কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযথ মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র শবে বরাত উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে প্রতিটি মসজিদে নফল নামাজ, ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আসকারের আয়োজন করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আজ রাত জেগে ইবাদত করবেন, মধ্যরাত্রিতে সেহরি খেয়ে আগামীকাল নফল রোজাও পালন করবেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শবে বরাত উপলক্ষে আলোচনা এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। এসব মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে ভোরে মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।
হাদীস শরীফে এটাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রাত্রি নামে অভিহিত করা হয়েছে। এর পক্ষকাল পরেই আসবে রহমত বরকত নাজাতের মাহে রমজান। শবে বরাতকে বলা হয় রমজানের মুয়াজ্জিন। পবিত্র শবে বরাত সৌভাগ্যের রজনী হিসেবেও পরিচিত। মুসলমানদের কাছে ১৪ শাবান দিবাগত রাত অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত। মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা খুলে দেন এ রাতে।
নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, এই রাতেই পরবর্তী বছরের মৃত্যুবরণকারী মানুষ এবং পরবর্তী বছরের জন্মগ্রহণকারী শিশুদের তালিকা করা হয়। রাতভর নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া মাহফিল, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি ইবাদতে মগ্ন থাকাই এ রাতের প্রধান শিক্ষা, যে শিক্ষা জীবনব্যাপী অব্যাহত রাখার তাগিদ দেয়া হয় এ রাতে।
এই রাতের ইবাদত-বন্দেগীর গুরুত্ব অপরিসীম। ফার্সি শব্দগুচ্ছ শবে বরাত অর্থ ভাগ্য রজনী। তবে আরবিতে একে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত। এ রাতে মানবসমাজ তথা বিশ্বের সব সৃষ্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি মানুষের জীবন-মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারণ এবং রুজি-রোজগার বণ্টন করেন। নাজিল করেন বান্দার প্রতি অশেষ রহমত। বান্দাদের আকুতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণেরও রাত এটি। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং বিপদগ্রস্তদের দেখান উত্তরণের পথ। এ কারণেই মুসলমানদের কাছে শবে বরাত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (দ) বলেছেন, শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এই রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছো কি কোনো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)। তাই এই রাত আগমনের পূর্বেই আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন থাকলে তা ঠিক করা ও কারও হক থাকলে তা আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে। এ রাতের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। সংবাদপত্র প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে পবিত্র শবে বরাতের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার প্রতি মানব কল্যাণে ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান।