আজ শনিবার, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শরীয়তপুরে নির্মানের ৩ মাস না যেতেই সরকারি ভবনে ফাঁটল!!

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন মাস না যেতেই শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৪১নং চরযাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নবনির্মিত ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর ফলে ঝুঁকি ও আতংকের মধ্যে ওই ভবনে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী।

জানা গেছে, ১৯২৩ সালে স্থানীয় পাঞ্জু শিকদার বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। টিনশেড মূল ভবনের পাশে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৩-এর আওতায় ২০১৭ সালে এলজিইডি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। চারতলা ভবনটির একতলার নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চার কক্ষের ভবনটি বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদার। বুঝিয়ে দেয়ার পর থেকেই ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা যায়। মেসার্স আব্দুল মান্নান লস্কর নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ করে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার মন্ডল বলেন, ঠিকাদার বুঝিয়ে দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ভবনটিতে পাঠদান শুরু করেছি। কিন্তু তিন মাস না যেতেই ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।

শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি জানালার কলামে বড় বড় ফাটল। মেঝের ফ্লোরের পলেস্তারা উঠে গেছে। সিঁড়ি ফেটে আলাদা হয়ে গেছে। ভবনের দেয়ালেও রয়েছে অসংখ্য ফাটল। ভবনের বারান্দার গ্রিলগুলোতে বাঁশের স্টিক দিয়ে ফিক দেয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন চারজন। ঝুঁকি নিয়েই ওই ভবনে চলছে পাঠদান।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ভবনটি যেকোনো সময়ে ধসে যেতে পারে। যে ঠিকাদার ভবনটি নির্মাণ করেছেন তিনি অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষার একটি শ্লোগান আছে ‘নিরাপদ পরিবেশে পাঠদান’। কিন্তু আমরা নিরাপদ পরিবেশে নাই, আমরা ঝুঁকিতে আছি। তাই ভবনটির সংস্কার প্রয়োজন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আসমা বেগম বলেন, ভবনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নতুন ভবনটিতে ফাটল ধরার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

ঠিকাদার আব্দুল মান্নান লস্করের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী ঠিকাদার সোহেল খান বলেছেন, কাজটি পায় মাদারীপুরের মেসার্স আব্দুল মান্নান লস্কর নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। আমি ঢাকায় আছি। ঢাকা থেকে এসে এ বিষয়ে কথা বলব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া বলেন, ঠিকাদার এলজিইডিকে ভবনটি এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল ধরার বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাব। কোনো অনিয়ম পেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি করেছে এলজিইডি। ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে শুনেছি। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।