
সুকান্ত মরেছিলেন যক্ষায় তেইশে
লিখেছিলেন তিনি ‘ছাড়পত্র’,
রানার ছুটেছে পৃথিবী ব্যাপী নতুন খবর নিয়ে,
ক্লান্ত হয়নি সে একটুকুও ;
কে বলেছে সুকান্ত মরেছেন?
মরনেও মৃত্যু নেই, সে তো অমর।
রোমান্টিক জগতের নাম করা কবি কিটস্
পঁচিশ বছরে চলে গেলেন কিন্তু
তাঁর নাইটিঙ্গেল ঘুরে বেড়ায় সদা সতেজ।
কবি লর্ড বায়রন মরে গেলেন ছত্রিশে
কিন্তু ‘সি ওয়াকস্ ইন বিউটি’,
তিনি তাঁর কবিতার পঙক্তি মালায়
রয়ে গেলেন চির ভাস্বর।
কাব্যময়ী ভাষণের মহাকবি-
তোমাকে হত্যা করেছে পঞ্চান্ন বছরে
কিন্তু তোমার মৃত্যু ঘটেনি,
তোমার দেহ ক্ষত বিক্ষত করেছে,
তোমার রক্তাক্ত লাশ অনাদরে অবহেলায় নিয়ে গিয়েছে শহর থেকে গ্রামে,
তবুও তোমার সুমহান কীর্তিকে ধ্বংস করতে পারেনি,
কেননা, তুমি জন্মেছ একুশের রক্ত পলাশের মধ্য দিয়ে, তোমার ঘাম, তোমার সাহস, তোমার চেতনার অগ্নিস্ফুলিঙ্গে জন্ম নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থান, উত্তাল মার্চ, আর একাত্তরের গর্ভে উদিত হয়েছিল আমাদের রক্তাক্ত স্বদেশ,
এ তো তোমারই কীর্তি জ্বল জ্বল করে নক্ষত্রের মতো।
যারা তোমাকে হত্যা করেছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে,
কেউ কেউ পলাতক আসামী, মদদ দাতাদের মুখোশ উন্মোচিত এবং অভিশপ্ত, তাদের অপমৃত্যু হবে নিশ্চিত।
কিন্তু তোমার বাংলাদেশ, তোমার দেয়া জাতীয় সঙ্গীত, তোমার জাতীয় পতাকা পত পত করে
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপে সুশোভিত, যতকাল বাংলা আর বাঙালির পদচারণায়
মুখরিত হবে এই জনপদ,
ততকাল স্বমহিমায় উচ্চারিত হবে তোমার অমর কবিতা –
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মু্ক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
তুমি অবারিত সোনালি ফসলের মাঠ,
তুমি আছো, তুমি থাকবে চিরদিন, তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী।
তুমি আছো বলেই
জোসনা রাতে চাঁদ হাসে বাঁশ বাগানে,
তুমি আছো বলেই বিজয়ের হাসি হাসে
মধ্য পাড়ার ছেলেমেয়েরা নরম তুলতুলে গালে,
তুমি আছো বলেই যৌবন যৌবন খেলা করে
আমাদের মরা নদী বারে বারে।
২৪.০৫.২০২০
মীর আবদুর রাজজাক
লেখকঃ কবি ও প্রাবন্ধিক
( প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয়প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া)
মোবাইল ঃ০১৭১৫৫৭১৬২২
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ঃ আমি জয়বাংলার লোক(২০১৮), বত্রিশ নম্বর বাড়ির আর্তনাদ(২০১৯) ও যখন তোমার নাম নিষিদ্ধ ছিল(২০২০)
profmirabdurrazzak@gmail.com