
আমি এখন রেসকোর্স ময়দানে
(নতুন নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
খাঁ খাঁ রোদে দুরন্ত বালকের মতো
ছুটে বেড়াচ্ছি কাকদের সাথী হয়ে
একটি কবিতার গন্ধ শুঁকে শুঁকে ;
এখানে একদিন একটি অসামান্য কবিতা
পড়া হয়েছিল, তখন দুপুর গড়িয়ে
পড়ন্ত বিকেল বেলা;
সেই কবিতার কথা মনে পড়ে আজ
তিনি ছিলেন কাব্যময়ী ভাষণের মহাকবি,
কী চমৎকার তাঁর কবিতার পঙক্তিমালা,
প্রতিটি মানুষের অন্তর ছুঁয়ে ছুঁয়ে গিয়েছিল
প্রতিটি মানুষকে সাহসী করে তুলেছিল
কিন্তু তিনি একজন কবি, শ্রোতা ছিল লক্ষ লক্ষ
বিপ্লবী জনতা, কণ্ঠে তাদের ‘জয় বাংলা’র শ্লোগান।
এখন, এখানে আছে সেই কবিতা মঞ্চের স্তম্ভ
গাছপালা, পাখি আর লেকের স্বচ্ছ পানি,
কান পাতলে শোনা যায় মানুষের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস আর অসংখ্য মানুষের স্বপ্নের মিছিল।
সেই কবিতার পঙক্তিমালা তিনি উচ্চারণ করেন
তাঁর যাদুকরী তর্জনী উঁচু করে
ছন্দে ছন্দে ঢেউ খেলে যায় জনসমুদ্রে।
তাঁর কবিতার বজ্রকণ্ঠ আজও গায়ে শিহরণ জাগায়, পুলকিত করে, শাণিত করে, উচ্ছ্বসিত করে আমাদের হৃদয়ে বারে বারে ক্ষণে ক্ষণে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যা বেলায় ঝিঁঝি পোকার গানে।
একটি কবিতার কী মন্ত্র মুগ্ধ সুর বেজে উঠেছিল
নেচে উঠেছিল পদ্মার ইলিশ, উড়ানির ধুসর চর,
প্রেম যমুনার ঘাট, সোজনবাদিয়ার ঘাট আর
পায়রাগুলো নির্ভয়ে আকাশে উড়েছিল,
একটি কবিতার জন্যে বদলে গেল মানচিত্রের রঙ,
একটি কবিতার কথায় মুক্তির ঝাঁঝাল সোপান
ঝরে গেল অজস্র বকুল পলাশ হাসনাহেনা
জন্ম নিয়েছিল একটি স্বাধীন উর্বর বদ্বীপ
তার গা ঘেষে সবুজের সোনালি সমারোহ;
একটি কবিতার অমর বাণী ভেসে বেড়ায়
ইথারের মতো মাঠময় দুর্বা ঘাস ইউক্যালিপটাসের
গাছে গাছে উচ্চারিত হয় সেই মহাকবির নাম,
আজও আমরা খুঁজে ফিরি তাঁকে পড়ন্ত বিকেলে
পৌষের শিশির ভেজা সকালে।
০২ জুন ২০২০
মীর আবদুর রাজজাক
লেখকঃ কবি ও প্রাবন্ধিক
( প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয়প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া)
মোবাইল ঃ০১৭১৫৫৭১৬২২
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ঃ আমি জয়বাংলার লোক(২০১৮), বত্রিশ নম্বর বাড়ির আর্তনাদ(২০১৯) ও যখন তোমার নাম নিষিদ্ধ ছিল(২০২০)
profmirabdurrazzak@gmail.com